শনিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৭

Movie review Dhaka Attack

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদি বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের কাছে সর্বোচ্চ মানদণ্ডে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তাহলে দীপঙ্কর দীপন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বিশ্ব মানদণ্ডে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
# আমি তো আরিফিন শুভর ভক্ত হয়ে গেলাম। দারুণ ভাবে অভিনয় করেছে।
# সোয়াত চীফ চরিত্রে এবিএম সুমন তো অনবদ্য। এ চরিত্রটা হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
# নায়িকা মাহীর চেয়ে কাজী নওশোভা আহমেদের অভিনয় আমার চোখে পানি নিয়ে এসেছে। একটা সংলাপ শেয়ার করছি
" সন্তান ডেলিভারি অবস্থা যখন সে মুমূর্ষু তখন নিজের কথা না ভেবে অপারেশনে তাঁর জীবনসঙ্গী এবিএম সুমনকে সেইফ থাকতে বলেছে" --- যেকোন হৃদয়বান অশ্রুসিক্ত না হয়ে পারবে না।
# খলচরিত্রে তাসকিন আহমেদ বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন প্যাটার্ন নিয়ে এসেছেন। তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ তো অসাধারণ।
সবশেষে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্যদের জন বিনম্র শ্রদ্ধা। আপনারা রাত জেগে থাকেন বলে আমরা নিরবে ঘুমাতে পারি।
# লাস্ট বাট নট লিস্ট , যারা পেশাগত জীবনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যোগ দান করবেন, তাঁরা একটু সময় বের করে ফিল্মটা দেখবেন।

বৃহস্পতিবার, ৫ অক্টোবর, ২০১৭

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের ভূমিকাই মূখ্য না সহায়ক

একটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হয় সে দেশের সরকার, শিক্ষক, ছাত্র, কর্মকর্তা - কর্মচারীর সহ জনগণের সহযোগিতায়। শিক্ষা অর্জন, মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের একটি। খাদ্য, বস্ত্রের মত শিক্ষাও আমাদের জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিক্ষা আমাদের অজ্ঞানতার অন্ধকার থেকে মুক্তি দিয়ে আলোর পথের পরিচালিত করে। আমাদের সঠিক পথ দেখায়। আমাদর ভালো মন্দ বুঝতে সহযোগীতা করে। শিক্ষা আমাদের হৃদয় সততা, নিষ্ঠা, মিতব্যয়ীতা, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ক্ষমার জন্ম দেয়। 

আমাদের দেশ, বাংলাদেশ। একটি সবুজ শ্যামল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। অর্থনীতিক দৃষ্টি থেকে বাংলাদেশ একটি উন্নায়নশীল দেশ। এদেশে অন্যতম সমস্যা হল অশিক্ষা। আমাদের সাক্ষরতা হার মাত্র ৬৫%। এখনো ৩৫ ভাগ মানুষ জ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত। একটি দেশ এগিয়ে যাওয়া অন্যতম সোপান হল " শিক্ষিত জাতি"। বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক এগিয়েছে। এক্ষেত্র শুধু শিক্ষকদের ভূমিকাই মূখ্য নয়, সহায়ক। সরকার, ছাত্র-ছাত্রী, জনগণ এর সাথে শিক্ষক সমাজ সম ভাবে ভূমিকা পালন করছে, একক বা মূখ্য ভাবে নয়। সরকার যদি বিনামূল্যে পাঠ্যবই না দেয়, ছাত্রছাত্রীরা যদি ক্লাসে না আসে, জনগণ যদি ট্যাক্স না দেয় তাহলে কি কোনদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা চলবে? শুধু শিক্ষক সমাজ দিয়ে চলবে কোন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা? তাহলে সরকার, ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক সমাজ একে অপরের পরিপূরক।

"বিদ্যালয় " শিক্ষা অর্জনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। বাংলাদেশে এখনো সব জায়গা সরকারি বিদ্যালয় নেই। বিদ্যালয় থাকলেও নেই বিদ্যুৎ, পর্যাপ্ত বেঞ্চ-টেবিল বা ক্লাস রুম। এখনো প্রায় সংবাদ পত্রে দেখি " খোলা আকাশের নিচে বসে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস করছে "। বিদ্যালয়ে মেয়েদের জন্য আলাদা টয়লেট নেই। কমন রুম নেই, লাইব্রেরি নেই। ঢাকা শহরে ৬০% বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। তাই শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিতে প্রথমেই কাঠামোগত উন্নতি প্রয়োজন। শুধু শিক্ষক দিয়ে উন্নায়ন করা যাবে না। আমাদের দেশের স্কুল গুলোর শিক্ষকদের সচ্ছতা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। খবরের কাগজে দেখতে পাই শিক্ষকরা কোচিং করার জন্য বাধ্য করছে না হলে পরীক্ষায় নম্বর কমিয়ে দিবে। ব্যবহারিক পরীক্ষায় নম্বর দিবে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার সুষ্ঠু কাঠামো। যেখানে সরকার বিনামূল্য বই দিয়ে, মেধাবীদের বৃত্তি দিয়ে, মেয়েদের উপবৃত্তি দিয়ে, আবিখা ( স্কুলে আসার বিনিময় খাদ্য) দিয়ে শিক্ষাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে সেখানে এক শ্রেণির অসাধু শিক্ষক শিক্ষাকে ব্যবসায় পরিনত করছে।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থারর অগ্রগতির জন্য ছাত্র-ছাত্রী, সরকার, জনগন ও শিক্ষক সমাজের সমন্বয় সাধন প্রয়োজন। কোন একক গুষ্ঠিকে মূখ্য বলা যাবে না। পরিশেষে, কাজী মোতাহার হোসেনের ভাষায়য় " একটা মইকে উপরে তুলতে হলে নিচ থেকেও ঠেলা দিতে হবে আবার উপর থেকেও টান দিতে হবে "। মই> শিক্ষা ব্যবস্থা মনে করলে, সরকারকে নিচ থেকে ঠেলা দিতে হবে আবার ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক সমাজকে উপর থেকে টান দিতে হবে।

প্রাণের শহর ঢাকা

’ঢাকা’ আমার স্বপ্নের নগর। আমার প্রাণের নগর। এ নগর সমাজের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তও উচ্চবিত্ত-সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবন ও জীবীকার আশ্রয়স্থল। ঢাকা বাংলাদেশের শুধু রাজধানী নয়, এটি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের কামনাবাসনার স্থান।ফ্রান্সের যেমন প্যারিস, অষ্ট্রিয়ার ভিয়েনা, জার্মানির বার্লিন মনুষ্যকাম্য মেগাসিটি তেমনি একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমার প্রিয় সিটি ঢাকা। এ নগর আমাকে আবাসস্থান দিয়েছে , উচ্চশিক্ষা অর্জনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছে, দিয়েছে সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। প্রেমে যেমন বিরহ আসে, মান-অভিমান হয় তেমনি কখনও কখনও নাগরিক সেবায় বঞ্চিত হয়ে এ নগরের প্রতি অভিমান সৃষ্টি হয়। নগর ছেড়ে চলে যেতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু বেলাশেষে ‘’ঢাকা’’ আমার স্বপ্ন , আমার প্রেরণা।

চারশ বছরের পুরানো শহর ‘ঢাকা’। সেই মুঘল সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বহু আন্দোলন সংগ্রামের সাক্ষী ‘ঢাকা’। সিপাহী বিদ্রোহ থেকে শুরু করে বঙ্গভঙ্গ, দেশভাগ, ভারতবর্ষ বিভাজন, পাকিস্তানি শাসন,মহান মুক্তিযুদ্ধও নব্বই এর গণ-আন্দোলন প্রতিটি রাজনৈতিক সংগ্রামস্থল ছিল ‘ঢাকা’। গত চারশ বছরে এ নগর বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা, বর্ণও জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে জীবনও জীবিকা দিয়েছে। দিনে দিনে গড়ে উঠেছে এক অসাম্প্রদায়িক মৈত্রী।

বিশ্বের বুকে ‘ঢাকা’ কখনও মসজিদের শহর, রিকশার শহর ,’’মসলিন” কাপড়ের শহর বলে পরিচিত হলেও এখন এটি লাল-সবুজের পতাকাবাহী ‘’ বাংলাদেশের” রাজধানী। প্রায় ১.৫ কোটি লোকের বাস এ নগরে। প্রতিটি নাগরিক সেবা এখানে উপস্থিত। স্বাধীনতা পরবর্তী শিল্পায়ন ও নগরায়ন ফলে, দুর্যোগ কবলিত এ দেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী যে নগরমূখী হয়েছে তা ‘ঢাকা’।আর তাই মাত্র ৫৬৫ বর্গমাইলের এ শহরে অনেকটা অমানবিক ভাবে এতগুলো মানুষ বাস করে। গড়ে রোজ ২৩০০ মানুষ ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্নে ঢাকায় আসে। যেহেতু ‘ঢাকা’একটি মেগাসিটি এবং এখানে সব ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় তাই ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্নে ঢাকায় আসা মানুষগুলো ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে গেলেও শহরেই থাকছেন। ক্রমবর্ধমান মানুষের চাপে ঢাকায় প্রতিনিয়ত আবাসন সংকট, দূষিত বায়ু, তীব্র যানজট, পরিবহণ সংকট, গ্যাস সংকট, নিরাপদ খাদ্যের অভাব, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, বিনোদন পার্ক ও খেলার মাঠ সংকট ঢাকাবাসীর নিত্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

অপরিকল্পিত নগরায়নের পাশাপাশি সমাজের এক শ্রেণির মানুষ এই নগরীকে নেতিবাচক ভাবে ব্যবহার করেছে। তাঁরা ফুটপাতগুলো অবৈধ ভাবে দখল করে মার্কেট করেছে, কাঁচাবাজার দিয়েছে, ঘরবাড়ি করেছে, বিনোদন পার্কগুলোতে মাদক ব্যবসা ও পতিতালয় করেছে। এরা স্থানীয় কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে কালো টাকা দিয়ে দিনের পর দিন ঢাকা শহরকে দূষিত করেছে।

তীব্র যানজট নগরের সবচেয়ে বড় সমস্যা। ঢাকার মোট রাস্তা রয়েছে ২২০০ কিলোমিটার। এর মাঝে ফুটপাত ৪০০ কিলোমিটার (দখলে)। প্রতিদিন গড়ে ২০০ গাড়ি ঢাকায় নিবন্ধিত যার মাঝে ১০০ ব্যক্তিগত গাড়ি। ব্যক্তিগত গাড়িগুলো মাত্র ৯ শতাংশ যাত্রী পরিবহণ করে আর জায়গা দখল করে রাখে ৩৪ শতাংশ। এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যানজটে প্রতি বছর আমাদের ৮৬ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয় যার বাজারমূল্য ১৯ হাজার কোটি টাকা।

পূর্বে পরিবেশ নিয়ে ঢাকার অধিকাংশ মানুষ সচেতন ছিলেন না। তাঁরা যেখানে সেখানে ময়লা ফেলতেন। অনেকে সাধারণ মানুষের চলাচলের রাস্তায়ও ময়লা ফেলতেন। এতে স্বাভাবিক হাঁটাচলা ভীষণ ভাবে ব্যহত হতো। ‘ঢাকা’ মহানগর হয়ে উঠেছিলো দূষণের শহর। কিছু খারাপ ব্যবসায়ী ঢাকার তিনটি নদী দখল করে বালু উত্তোলন, নদী ভরাট, ব্জ্র্য নদীতে ফেলে নদীর পরিবেশ পুরোপুরি ভাবে দূষিত করেছে।

ঢাকাবাসী সর্বপ্রথম নাগরিক সেবা পেতে শুরু করে ১৯৯৪ সালে যখন ঢাকাবাসীর ভোটে তাদের প্রথম নগরপিতা হয়ে আসেন মরহুম জনাব মোহাম্মদ হানিফ(১৯৯৪-২০০২)। তাঁর আমলে ঢাকার উন্নয়নে নতুন রাস্তাঘাট নির্মাণ,নর্দমা, ফুটপাত উন্নয়ন ও সংস্কার, নিরাপদ সড়ক নির্মাণে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, আন্ডারপাস ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। সুপরিকল্পিত ভাবে ধানমণ্ডি লেক, গুলশান লেক তৈরি করা হয়। তিনি ঢাকা বাসীর জন্য সুপেয় পানির চাহিদা পূরনে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। সমগ্র ঢাকায় বিজলী বাতি লাগানো, বনায়ন করা,নগরের শ্রী বৃদ্ধি করার জন্য ফোয়ারা নির্মাণ , ছাত্রছাত্রীদের জন্য খেলার মাঠ, পাঠাগার, শরীরচর্চা কেন্দ্র তাঁর আমলেই তৈরি করা হয়। নারীদের জন্য ‘’ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ” ‘’মাতৃসনদ” তৈরি করেন।

পরবর্তীতে (২০০২-২০১৪) সাল এই ১২ বছর ঢাকা সবচেয়ে বেশি দূষিত হয়। যোগ্য নগর পিতার অভাব, প্রশাসনিক দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, মাদকের নগরে পরিণত হয় ঢাকা। নানা সামাজিক অপরাধে দিন দিন তাঁর লাবণ্য হারাতে থাকে। নদী, ফুটপাত, পার্ক, মাঠগুলো দখল হয়ে যায়। রমনার বটমূলে বোমা হামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলায় কলঙ্কিত হয় ‘ঢাকা’। এই সময় বহুবার বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার নাম উঠে আসে।

প্রশাসনিক ভাবে ঢাকাকে ২ ভাগে ভাগ করা হয় ২০১১ সালে। চার বছর পর ২০১৫ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এর জন্য আলাদা আলাদা নগর পিতা পাই। দক্ষিণের মেয়র হিসেবে পাই “ আলহাজ্ব জনাব সাইদ খোকন’’ ও উত্তরের মেয়র হিসেবে পাই ‘’আলহাজ্ব জনাব আনিসুল হক”। তাদের দুজনেরই নির্বাচনী ওয়াদা ছিল “Green Dhaka”। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে রোজ ১৫ ঘণ্টা করে তারা বাসযোগ্য ‘ঢাকা’ গড়তে কাজ করে যাচ্ছেন। গত প্রায় ২ বছরে ঢাকা অনেকটা বাসযোগ্য নগরে পরিণত হয়েছে।

দুজন মেয়রই চেষ্টা করছেন ফুটপাত দখলমুক্ত রাস্তাঘাট করা। গুলিস্তান, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর ফুটপাত উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণে নিরাপদ ভাবে চলাচল করার জন্য ৭ টি ফুটওভার ব্রিজ করা হয়েছে। ফুটওভার ব্রিজগুলোতে দুপাশে পরিবেশ বন্ধু গাছ লাগানো হয়েছে। এতে অনেকটা “GREEN DHAKA’’ নিশ্চিত করা যাচ্ছে। মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য সমগ্র ঢাকায় বেশকিছু “পাবলিক টয়লেট” নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো বেশ স্বাস্থ্য সম্মত ও ব্যবহারযোগ্য। ‘’GREEN DHAKA’’ গড়ার জন্য দুই মেয়রই চমৎকার একটি কাজ করেছে তা হল প্রতিটি রাস্তায় “ Waste Bin” বসানো। আজ ঢাকাবাসী অনেকটা সচেতন। তাঁরা আজ যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলে ‘’Waste Bin” ফেলছে। রাস্তাঘাট পরিষ্কার থাকছে।

আমরা জানি, কোন একটি শহর গড়ে ওঠে কোন নদীকে কেন্দ্র করে। যেমন. “টেমস নদীর” তীরে লন্ডন শহর অবস্থিত তেমনি আমার প্রাণের ‘ঢাকা’ বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। একসময় ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণ ছিল বুড়িগঙ্গা নদী। দুঃসময়ের স্রোতে সে তার লাবণ্য হারিয়ে ফেলেছে। একটা নদী হওয়ার জন্য যে যে গুণগুলো থাকা প্রয়োজন তার একটিও ছিল না বুড়িগঙ্গায়। বিশ্বব্যাংক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন “বুড়িগঙ্গা রক্ষা” প্রজেক্ট গ্রহণ করে যা খুব প্রশংসা লাভ করেছে। এখন বুড়িগঙ্গার পানি অনেকটা দূষণমুক্ত।

ঢাকার প্রতিটি রাস্তায় বিদ্যুত সাশ্রয়ী “এলইডি লাইট” লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। খেলার মাঠ গুলো আধুনিক করা হচ্ছে। পুরানো বিভিন্ন পাঠাগার ও শরীরচর্চাকেন্দ্র সংস্কার করা হচ্ছে। এতে ছাত্রছাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা নিশ্চিত হচ্ছে।

বর্তমানে ‘’যানজট’’ ঢাকার প্রধান সমস্যা। সিটি কর্পোরেশনগুলো ২০ বছরের অধিক ফিটনেস বিহীন গণপরিবহণ বন্ধ করেছে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে যানজট দূর করা যাচ্ছে না। তাই সিটি কর্পোরেশনগুলো রাস্তার আঁকার বাড়ানোর চেষ্টা করছে। পাশাপাশি পরিবহণ, সড়ক- যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে গণপরিবহণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

নাগরিক স্বাস্থ্য সেবার জন্য উন্নত ড্রেনেজ সেবা, মশা নিধন, কুকুর দমন, এক স্থানে কুরবানির পশু জবাই করা, নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা সহ বিভিন্ন প্রজেক্ট নেওয়া হয়েছে।

পরিশেষে, আমার প্রাণের নগর “ ঢাকা”। আমার মত কোটি সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবীকার ব্যবস্থা করেছে ‘ঢাকা’ শহর। আমরাই এ শহরের প্রাণ। আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলে এক স্বপ্নের ‘ঢাকা’ নগরী করতে পারবো। মেয়র, জেলা প্রশাসন একা সবকিছু করতে পারবে না। আমরা যদি আমাদের নাগরিক দায়িত্ব গুলো পালন করি তাহলেই উন্নত ‘ঢাকা’ গড়া সম্ভব। ফ্রান্সের প্যারিসকে দেখে কথাসাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর ‘’পথে প্রবাসে’’ ভ্রমণকাহিনিতে বলেছিলেন “ অর্ধেক নগরী তুমি, অর্ধেক কল্পনা’’ তেমনি স্বপ্নের নগর ঢাকাকে নিয়ে আমি বলতে পারি “অর্ধেক নগরী তুমি, অর্ধেক কল্পনা’’।

------------ছাত্র, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। 

পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন

বঙ্গভঙ্গের মাত্র ৩ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন । বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ‘’ চরিতাভিধান’’ গ্রন্থে পল্লীকবি জসীম উদ্ দীনের জন্ম সাল ও তারিখে বলা হয়েছে ১লা জানুয়ারি ১৯০৩ সাল। ‘ জসীম উদ্ দীন’ গ্রন্থের লেখক সুনীল মুখোপাধ্যায়ও তাই মনে করেন । পল্লীকবি জসীম উদ্ দীনের সাহিত্যকর্ম নিয়ে সমালোচনা করেছেন সাহিত্যিকদের মাঝে তিতাশ চৌধুরী , সেলিমা খালেক, শিশিরকুমার দাশ মনে করেন পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন জন্মসাল ১৯০৪ সাল।


পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন এর জন্মস্থান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় । যে জেলায় জন্মগ্রহণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (১৯২০-১৯৭৫) । ফরিদপুর জেলা থেকে ২ মাইল দূরে তাম্বুলখানা গ্রামে অবস্থিত নানাবাড়ি জন্ম নেন ।


কবির পিতার নাম মৌলানা আনছার উদ্দীন মোল্লা আর মায়ের নাম আমেনা খাতুন । পারিবারিক সদস্য বলতে বাবা-মা, দাদা, আর ৪ ভাই । মফিজ উদ্ দীন, সইদউদ্ দীন, নূর উদ্ দীন মোল্লাগিরি ছিল কবিদের পারিবারিক পেশা। যদিও কবির পিতা শিক্ষকতা করেছেন। তাম্বুলখানা গ্রামে হিন্দু- মুসলমান পাশাপাশি বাস ছিল। পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন ছোটবেলায় যে স্কুলে পড়তেন সেখানে শতকরা ৯৫ জন হিন্দু ছিল। কিন্তু গ্রামের মানুষদের মাঝে কোন ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল না। গ্রামের মানুষদের মাঝে অর্থনীতিক সচ্ছলতা ছিল না কিন্তু পারস্পারিক ভালোবাসা ছিল। এই সবুজ-শ্যামল গ্রামবাংলার পরিপূর্ণতা কল্পনা করে পরে তিনি নক্সী-কাঁথার মাঠ ও সোজনবাদিয়ার ঘাট রচনা করেন। কবি জসীম উদ্ দীনের কবি প্রতিভার উন্মেষ ঘটেছিল দাদার হাত ধরে। দাদার কাছে কবি গল্প, গান ও কাহিনি শুনতেন। কবি তাঁর লেখায় বলেছেন ''শিশু বয়সে যেমন মাতৃস্তন্যে দেহের পুষ্টি হইয়াছিল, তেমনি মনের কুসুম ফুটিয়াছিল আমার দাদাজানের মুখে অসংখ্য রূপকথা, শ্লোক, আর ছড়া শুনিয়া''

ছোটবেলা থেকেই জসীম উদ্ দীনের মন রঞ্জিত হয়ে উঠেছিল লোকসংস্কৃতির নানা শব্দে। অবধারিতভাবে এর প্রভাব তাঁর সাহিত্যকর্মে। তিনি জানিয়েছেন, ''বেদের মেয়ে'' নাটকে যে গান আছে ‘ও বাবু! সেলাম বারে বারে’’ টা অষ্ট-গানের সুরেই লিখা। জসীম উদ্ দীন ছোটবেলায় কবিগান, পুথিপাঠ, শ্যামাসঙ্গীতের সাথে পরিচিত হন।


প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবনে কবি তাঁর পিতার স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে তিনি ফরিদপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। তিতাশ চৌধুরী ও সেলিমা খালেক তাদের বইয়ে বলেছেন, জসীম উদ্ দীন ২য় বিভাগের সাথে ১৯২১ সালে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করেন। সুনীল মুখোপাধ্যায় অন্যদিকে মনে করেন ১৯২৪ সালে জসীম উদ্ দীন ম্যাট্রিক পরীক্ষায় পাশ করেন।

ফরিদপুর জেলার সবচেয়ে প্রাচীন কলেজ ‘ রাজেন্দ্র কলেজ (১৯১৮)’। এই কলেজ থেকে তিনি সংস্কৃত, যুক্তিবিদ্যা ও ইতিহাস নিয়ে আই এ পাস করেন।

নজরুলের যেমন ‘ বিদ্রোহী’ জীবনানন্দের ‘ বনলতা সেন’ তেমনি পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন এর ‘কবর’ কবিতা।‘কবর’ কল্লোল পত্রিকার ৩য় সংখ্যা, আষাঢ় ১৩৩২- , ১৯২৫ সালে প্রকাশিত হয়। পল্লীকবি জসীম উদ্ দীন যখন বি. এ. ক্লাসের ছাত্র তখন দীনেশচন্দ্র সেনের কাছ থেকে চিঠি পেলেন যে তাঁর কবিতাটি ম্যাট্রিক ক্লাসে পাঠ্য হয়েছে। পল্লীকবি জসীম উদ্ দীনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘রাখালি’। ১৯২৯ সালে তাঁর বিখ্যাত ‘’ নক্সী-কাঁথার মাঠ” প্রকাশিত হয়। সেই বছরে কবির স্নাতক শেষ হয়। কবি ফরিদপুর থেকে কলকাতায় চলে আসেন। ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যেখানে শিক্ষক হিসেবে পান দীনেশচন্দ্র সেনকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পড়া অবস্থায় একবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সরাসরি নাটক দেখেন এবং শে রে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের সাথে দেখা করেন। শে রে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের সাহায্য নিয়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হন। ১৯৩১ সালে তিনি ২য় শ্রেণিতে ৮ম স্থান অর্জন করে এম এ পাশ করেন।

১৯৪৩ সালে মহসীন উদ্দীনের মেয়ে ১০ম শ্রেণির ছাত্রী মমতাজ- এর সাথে কবির বিয়ে হয়। তারপর থেকে মমতাজ জসীম উদ্ দীন । তাঁর ডাকনাম ছিল মণিমালা।

১৯৩৮-৩৯ সাল জসীম উদ্ দীনের জন্য স্মরণীয় কারণ নক্সী-কাঁথার মাঠের মিসেস মেরি মিলফোর্ড কৃত ইংরেজি অনুবাদ ''The Field of the Embroidered Quilt'' ১৯৩৯ সালে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়। বইটির ভূমিকা লিখেছিলেন বিখ্যাত নৃতাত্ত্বিক ভেরিয়ার এলউইন । তিনি লিখেন, It is impossible to read this deeply-moving tale and continue to feel superior or indeffirent to the villager who is capable of such passionate love & such deep sorrow’

২৫ ডিসেম্বর ১৯৪৩ সালে তিনি পিতাকে হারান। তিনি পিতা-মাতার খুব অনুগত সন্তান ছিলেন।পাশাপাশি ভীষণ সংসারীও ছিলেন। ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় সরকারের পাবলিসিটি বিভাগে অফিসার পদে যুক্ত হন। জসীম উদ্ দীন ভাষা-আন্দোলন, আইয়ুব খানের শাসন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। 
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কবিতাও লিখেছিলেন।তিনি আমেরিকা, ফ্রান্স, রাশিয়ার বিভিন্ন সাহিত্য সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৬৯ সালে কলকাতার রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি.লিট ডিগ্রি পান। ১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমি পদক পান , ১৯৭৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন।


জসীম উদ্ দীন ১৩ মার্চ ১৯৭৬ সনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাকে তাঁর নিজ গ্রাম গোবিন্দপুরে দাফন করা হয়।
                                                             ----------আনাছ আল জায়েদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

শিশু বিকাশ কেন্দ্র

প্রায় ৭ দিন ধরে আমি একটি নাটক ফলো করছি 'ইউনিসেফ বাংলাদেশ পরিবেশিত-রংধনু'। নাটকটি রচনা করেছেন হুমায়ূন আহমেদ আর পরিচালনা করেছেন আবুল হায়াত।১৩ পর্ব বিশিষ্ট রংধনু নাটকের মাধ্যমে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। যেমন.


১. প্রতিটি শিশুর প্রাথমিক জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা, মননের বিকাশ ১-৫ বছরের মাঝেই হয়ে যায়। তাই প্রতিটি শিশুর সুষ্ঠু বিকাশের জন্য তাঁর সাথে ভালো আচরণ, নিয়মিত বিশ্রাম ও স্বাধীনতা প্রধান করতে হবে।


২. প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার পূর্বে তাকে প্রাক-প্রাথমিক স্কুলে যেতে হবে। প্রাক-প্রাথমিক স্কুলগুলো একটি শিশুবান্ধব বিনোদন কেন্দ্র হবে।নানা ধরনের ইনডোর-আউটডোর খেলার ব্যবস্থা থাকতে হবে। শিশু বিকাশ কেন্দ্রগুলো শিশুদের হাত ধোয়া, সাবান ব্যবহার, নখ কটা, চুল কাটার প্রয়োজনীয়তা শেখাবে।


৩. শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার শিকার শিশুদের মূলধারার শিশুদের সাথে পাঠদান, খেলার সুযোগ দিতে হবে। ফলে শিশুরা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবে।


৪. পারিবারিক বন্ধন ঠিক রাখতে হবে। ছোট শিশুদের সামনে পিতামাতা বা বড়দের ঝগড়া করা যাবে না। এতে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।


৫. আল্লাহতায়ালা প্রতিটি শিশুকে আলাদা আলাদা মেধা ও প্রতিভা দিয়ে তৈরি করেছেন। তাই তাঁর প্রতিভাকে আমাদের প্রশংসা করতে হবে।এর ফলে শিশুরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে।
নাটকের লিঙ্ক দিয়ে দেয়া হল https://www.youtube.com/watch?v=3kf9r0H7ZYo 
--------------------- আগামী পৃথিবী হউক শিশুবান্ধব---------------------------