সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭

নেমেসিস নাটক



বাংলা নাট্যসহিত্যে নূরল মোমেন (১৯০৮-১৯৮৯) তাঁর নেমেসিস(১৯৪৮) নাটকের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ(১৯৩৯-১৯৪৫)মধ্যবর্তী সময়কালে দুর্ভিক্ষের সময় চোরাকারবারিদের নিয়ে গড়ে উঠেছে যেখানে আঙুর ফুলে কলা গাছ হয়ে যাওয়া একটি চরিত্র সুরজিত নন্দী।এই নাটকে নূরুল মোমেন দেখিয়েছেন যে, অসৎ উপায়ে অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে সুরজিত নন্দী সাধারণ মানুষের জীবনে যে দুঃখ- দুর্দশা বয়ে এনেছে তার প্রতিশোধ হিসেবে দেবী নেমেসিস(প্রতিহিংসার দেবী)তাঁর জীবন কেড়ে নিয়েছে।

নূরল মোমেন মূলত ষাটের দশকের নাট্যকার।তাঁর সমসাময়িক নাট্যকাররা হলেন, গোলাম মোস্তফা(১৮৯৭-১৯৬৪), জসিম উদ্ দীন(১৯০৩-১৯৭৬), শামসুর রহ্মান(১৯২৯-২০০৬), ফররুখ আহ্মদ(১৯১৮-১৯৭৪), আ.ন.ম বজলুর রশীদ(১৯১১-১৯৮৬), আলাউদ্দিন আল আজাদ(১৯৩২-২০০৯)।

নূরল মোমেন বাংলা নাট্যসহিত্যে চরিত্রের সংঘাত সৃষ্টিতে অনন্য দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। নূরল মোমেন ১৯৪৪ সালে ‘আনন্দ বাজার’ পত্রিকায় তাঁর ‘রূপান্তর’ নাটিকাটি প্রকাশের মাধ্যমে বাংলা নাটকে প্রবেশ করেন। নূরল মোমেনের উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হল যদি এমন হত (১৯৬০), নয়া খান্দান(১৯৬২), আইনের অন্তরালে (১৯৬৭), শতকরা আশি (১৯৬৯), যেমন ইচ্ছা তেমন (১৯৭০) ইত্যাদি।দেশের আর্থ-সামাজিক সমস্যাকে বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে উদ্দেশ্যবাদী চিন্তা থেকে নাট্যচর্চা করেছেন।
‘নেমেসিস’ বাংলা নাটকের অভিনব সংযোজন। এটি একক চরিত্রের নাটক। বাংলা সাহিত্যে একক চরিত্রের নাটক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছাড়া আর কেউ লিখেনি।

এ নাটক সম্পর্কে নূরুল মোমেনের মন্তব্য হল,
    
‘ এই নাটকটিতে গ্রীক ট্র্যাজেডির চিরায়িত সময়,স্থান ও ক্রিয়া- এই ঐক্যত্রয়ের আঙ্গিক ঠিক রেখে চতুর্থ ঐক্য চরিত্রের একত্ব সংযোগ করা হয়েছে’।

নাটকে আমরা দেখতে পাই, দরিদ্র স্কুল মাস্টার সুরজিত নন্দী বিত্তবান হওয়ার চুক্তি করে হবু শ্বশুর নৃপেন বোসের কাছে, শুধুমাত্র প্রিয়তমা সুলতাকে পাওয়ার জন্য।
    
‘তোমার মত তাঁকে দিয়েও প্রতিজ্ঞা করিয়েছি, তিন মাস তোমার সাথে সংশ্রব না রাখতে। ঝুন্রমাল ো অসীমের সাহায্য পেলে এই সময়ের মাঝে পাঁচলক্ষ টাকা আয় করা কোন অসম্ভব প্রস্তাব নয়। বিবেকটাকে সাপের খোলসের মত ত্যাগ করে নতুন হয়ে বেরিয়ে এসো। সময়ে আবার খোলস পড়বে। এ বর্ণচোরা দেশে মহারথীদের সামিল হওয়া ঐ একই পন্থা’

প্রিয়তমা সুলতাকে পাওয়ার জন্য মূলত দরিদ্র মাস্টার সুরজিত নন্দী দেশজাতির সাথে বিশ্বাসঘতকতায় লিপ্ত হয়। নৃপেন বোসের শর্তপূরণের জন্য আর মাত্র এক লক্ষ টাকা বাকি এসময় সুরজিতের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়,
     
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার বাংলাদেশ আজ নিরন্ন! বিশ্বের দোষ দেব না। আমাদের নালিশ আজ বাংলাদেশের লোকের বিরুদ্ধে, যারা দেশবাসীর উদ্যত হা’র সমুখ থেকে অন্ন সরিয়ে নিচ্ছে চারগুণ লাভের আশায়। অনাহার আর ক্ষুধায় দেশটাকে পিষ্ট করেছে। মা’র স্তনে দুধ নেই। চুষে চুষে দুধ না পেয়ে সন্তানগুলো কুকুরছানার মত কেই কেই করছে মার বুকে’।  
দেশজাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে করতে সুরজিতের মনে ভয়ানক ক্লান্তি নেমেছে। সে কৃতকর্মের জন্য আনুশচনায় ভুগতে শুরু করে।
    
‘আমার মৃত্যুর পর আমার স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি ও ব্যাংকের টাকা দরিদ্রের সেবায় ব্যয় করিবার জন্য একটি ট্রাস্ট গঠন করছি’।


সুরজিত প্রতিনিয়ত অনুশোচনায় ভোগে। সামান্য অর্থ লোভের জন্য কতবড় অন্যায় করেছে সে। তখন তাঁর বিবেক বলে,
  
‘ মানুষের উপর রকমারি অত্যাচার করেছো। মৃত্যুদূতের দুহাত কাজে ভরে দিয়েছ। তাঁকে সব্যসাচী করে তুলেছো- তুমি। অন্ন থেকে বঞ্চিত করে, মরার পথে মানুষকে শুধু বসিয়ে দাও নাই, ওষুধ থেকে বঞ্চিত করে বেঁচে উঠার লড়াইয়ের হাতিয়ার থেকে বঞ্চিত করেছো- এই তুমি’।


এক সময়ের বন্ধু অসীম, যে তাঁকে হাত ধরে অন্ধকার পথে নামিয়েছিল সে-ই তাঁর বুকে ছুরি বসিয়ে দেয়। হত্যা করে। সে সুলেখার মুখখানি, অনাগত সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারে নি।


‘ একটা ধোঁকার উপর আমার একমাত্র সন্তানকে আমার সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে , ওগো প্রতি হিংসার দেবী, তোমার লজ্জা করলো না। তুমি নীচ, তুমি হীন, তুমি জঘন্য’।

নূরুল মোমেন যে উদ্দেশ্য নিয়ে নাটক রচনা করেছেন তিনি তাঁর জায়গায় সফল। তিনি 
মনে প্রাণে চেয়েছেন অপরাধীদের করুণ শাস্তি হউক যারা দুর্ভিক্ষে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিয়েছে। তাইতো নেমেসিস দেবীর মাধ্যমে সুরজিতের করুণ পরিণতি রচনা করেছেন।
     
        আনাছ আল জায়েদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।





    

রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৭

শৈলীবিজ্ঞান

সাহিত্য রচনা বা মুখে উচ্চারিত ভাষার শৈলী বিশ্লেষণই হল শৈলীবিজ্ঞান(Stylistics)। তবে সে বিশ্লেষণকে অবশ্যই ভাষাবিজ্ঞান সম্মত হতে হবে। শৈলীবিজ্ঞান হল ভাষা বিজ্ঞানের সেই অংশ যেখানে ভাষাব্যবহারের রূপরীতি ও স্টাইলের ব্যাখ্যা বা পর্যালোচনা করা হয়।


‘শৈলীবিজ্ঞান’ সম্মত সাহিত্যবিচার অনেক বেশি objective; সেখানে লেখকের বাক্যগঠন, শব্দব্যবহার, দীর্ঘ ও হ্রস্ববাক্য ব্যবহারের পৌনঃপুনিকতা,অলংকার ইত্যাদির উপর জোর দেয়া হয়।
                                                 ্ব -আনাছ আল জায়েদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ।

বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭

Review of Viceroy's House movie.

খুব পরিমিত ভাবে ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাজনের উপর নির্মিত হয়েছে " viceroy's house" মুভিটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-১৯৪৫) পরবর্তী যখন শেষ ইংরেজ বাইসরয় লর্ড মাউন্ট বার্টেন ভারতবর্ষ শাসনে আসেন তিনি খুব মানবিক প্রশাসক হিসেবে , অসাম্প্রদায়িক মন মানসিকতা নিয়ে মুসলমান, হিন্দু ও শিখ দের মাঝে অভিন্ন নানা উৎসব চালু করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বাজায় রাখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহের তীব্র ধর্মান্ধতার জন্য ১৯৪৬ সালে কলকাতায়, নোয়াখালী ( পূর্ববঙ্গ- বাংলাদেশ) মারাত্মক দাঙ্গা হয়। সাধারণ মানুষের হিন্দুস্থানের প্রতি ভালোবাসা থাকার পরেও কংগ্রেস- মুসলিম লীগের ব্যক্তিগত রেষারেষির জন্য শেষ পর্যন্ত দেশ বিভাগের (১৯৪৭) বলি হয় সাধারণ মানুষ। সৃষ্টি হয় চরম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ। শেষ হয়ে যায়, গল্পের নায়ক নায়িকা জিৎ ( হিন্দু) ও আলিয়া ( মুসলিম) গভীর প্রণয়।
এই চলচ্চিত্র দেখে হাসান আজিজুল হকের ভাষায় বলতে হয়,
'' দেশ ছেড়েছে যে তাঁর ভেতর বাহির সব একাকার হয়ে গেছে''
Anas Al Jaed, Jagannath University, Dhaka- Bangladesh.

বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০১৭

ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ

''ইয়েমেন''-মধ্যপ্রাচ্যের একটি মুসলিম দেশ। দুই বছর যাবত সৌদী আরব এই দেশটির স্থল, আকাশ পথ বন্ধ করে রেখেছে। ফলে দুবছর এই মরুভূমিপূর্ণ দেশটিতে কোন খাদ্য বা সহায়তা যেতে পারেছে না। সৌদী সরকার কোন বিমান ঢুকতে দিচ্ছে না। গতকাল 
জাতিসংঘ নিরাপত্তা প্রাধান ইটালির প্রতিনিধি বলেন যে,

'' ইয়েমেনে- আগামী কয়েকদিনের মাঝে এমন দুর্ভিক্ষ হবে যা এই পৃথিবীর মানুষ কয়েক শতাব্দী ধরে মনে রাখবে''

সন্ত্রাসী হামলার আজুহাতে অসহায় মানুষের প্রতি সৌদী আরব জোটের এই সিদ্ধান্ত, মানবতার সবচেয়ে আমানবিক আচরণ। আরবরা পৃথিবীর জঘন্য জাতিগুলোর মাঝে একটি, যাদের হেদায়াতের জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ, মুহাম্মদ(সঃ)-কে আল্লাহ্‌ তায়ালা পাঠিয়েছেন।

আজ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আছেন বলে, মহানুভবতায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে খাদ্য, বস্ত্র, আবাস , ওষুধ দিয়েছেন কিন্ত আরবে তো একজন শেখ হাসিনা নেই, কে দেখবে ইয়েমেনের নাগরিকদের?
#আনাছ আল জায়েদ।